DON'T MISS
Home » Bangladesh » ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় ৬২ বাংলাদেশি, নেই আরাভের নাম

ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় ৬২ বাংলাদেশি, নেই আরাভের নাম

ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় ৬২ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। তবে সেখানে সম্প্রতি আলোচনায় আসা পুলিশ পরিদর্শক খুনের আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের নাম নেই। যদিও পুলিশ বলছে, রবিউল ওরফে আরাভ খানের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করাতে পেরেছে। এখন তাঁকে ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আরাভ খান এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে অবস্থান করছেন বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি হয়েছে কি না, এ বিষয়ে ইন্টারপোলের কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি জানতে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আজ মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হয়। তবে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির কোনো তথ্যও তারা রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি।

ইন্টারপোল কী

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ইন্টারপোল। সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও অপরাধ–বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করে এক দেশে অপরাধ করে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ধরতে সহায়তা করে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা (প্ল্যাটফর্ম), যেখানে সদস্যরাষ্ট্রগুলো এক হয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কাজ করে। অন্য দেশে পালিয়ে থাকা সন্দেহভাজন অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা যায়। রেড নোটিশ জারি করার মাধ্যমে সন্দেহভাজন অপরাধীর বিষয়ে সব দেশকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে ওই অপরাধী অন্য দেশে আত্মগোপন করলেও তাঁকে যেন নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

আরাভ খানের নামে রেড নোটিশ জারি হলে দুবাই থেকে তাঁকে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ হবে না বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। দুই প্রক্রিয়ায় কোনো অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

একটি হলো কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অন্যটি হলো পুশব্যাক (কোনো দেশ নিজেদের উদ্যোগেই যদি ফেরত পাঠায়)। কূটনৈতিক প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। এটি নির্ভর করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া কেমন। এ ক্ষেত্রে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকলেও অপরাধীকে ফেরানো যায়। তবে বন্দী বিনিময় চুক্তি থাকলে দুই দেশের মধ্যে একধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ। তবে সেই চুক্তি না থাকলে অপরাধী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।

উদাহরণ হিসেবে, মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (টিপু) হত্যা মামলার আসামি সুমন শিকদার ওরফে মুসাকেও সমঝোতার ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মুসা ওমানে অবস্থান করছেন, এমন তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) তাঁকে গ্রেপ্তারে ওমানের এনসিবিকে অনুরোধ জানায়। গত বছরের ১৭ মে ওমান পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই বছরের ৯ জুন পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল মুসাকে নিয়ে দেশে ফেরে।

আরাভকে যেভাবে ফেরানো যেতে পারে

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকলে অপরাধীর বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সদস্যদেশগুলোর সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তবে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা না হলে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইন্টারপোলের রেড নোটিশে নাম থাকা বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ২০১৯ সালে দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। কিন্তু কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হলেও তখন তাঁকে ফেরানো যায়নি। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দণ্ডিত বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে। যদি দণ্ডিত অপরাধী সেখানে অবস্থান করেন, তবে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের একধরনের বাধ্যবাধকতা আছে। যদি দণ্ডিত না হন, তাঁদের বিস্তারিত জানিয়ে যে কাউকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ওই সূত্র বলছে, আরাভ খান ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গেছেন। তবে তিনি ভারতীয় নন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় তিনি সেটি করেছেন। বাংলাদেশ প্রথমে বিষয়টি প্রমাণ করবে। এতে করে দুবাই যাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন, সেটি প্রমাণিত হবে। একজন যদি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই যান, তবে তিনি সেখানেও বড় ধরনের অপরাধে যুক্ত হতে পারেন। এ বিষয়েই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বার্তা দেওয়া হবে। তারপর সমঝোতার ভিত্তিতে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*