DON'T MISS
Home » Entertainment » বিচারের মুখে ট্রাম্প, স্বৈরতন্ত্রকে যে বার্তা দিল

বিচারের মুখে ট্রাম্প, স্বৈরতন্ত্রকে যে বার্তা দিল

লেখা:

টেরি লিন কার্ল

আমেরিকান গণতন্ত্রকে ক্রমাগতভাবে অকার্যকর হতে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা আতঙ্ক বোধ করছিলেন। পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য উৎকোচ দেওয়ার মামলায় নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর তাঁরা হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।

আইনের শাসনের আরেকটি বিজয় (যদিও তুলনামূলকভাবে কম তাৎপর্যপূর্ণ) হয়েছে গত ২৮ মার্চ। ওই দিন কলাম্বিয়ার একটি ডিস্ট্রিক্ট আদালত পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো টোলেডোকে (অর্থ পাচার এবং ব্রাজিলের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় চার বছর আগে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ গ্রেপ্তার করে) ব্রাজিলের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন।

মামলার ফল যা-ই হোক না কেন, এই দুই নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করানোটা দেশে ও বিদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

নিশ্চিত করে বলা যায়, ফ্রান্স, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো গণতান্ত্রিক দেশ তাদের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, এমনকি সাজা পর্যন্ত দিয়েছে। তবে কিনা ট্রাম্পের এই অভিযুক্তি ও গ্রেপ্তার হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ঘটনা।

অনেকেই, বিশেষ করে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা এই মামলার গুরুত্বকে খাটো করে দেখছেন। কিন্তু আদৌ তা গুরুত্বহীন নয়। ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সংসর্গ হওয়ার কথা চেপে যাওয়ার জন্য ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ট্রাম্প অর্থ দিয়েছিলেন এবং সেই অর্থ মাইকেল কোহেন নামের এক আইনজীবীর মাধ্যমে স্টর্মিকে দেওয়া হয়েছিল বলে ২০১৮ সালে একটি আদালতে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই মামলায় মাইকেল কোহেনের তিন বছরের জেলও হয়।

স্থানীয়ভাবে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদ, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব এবং ঘৃণাসূচক ভাষা ব্যবহারের আধিক্য যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ভয়ানক বিপদে ফেলে দিয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি দিন দিন ক্রিশ্চিয়ান জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকছে। প্রতি পাঁচজন রিপাবলিকানের মধ্যে একজন এবং ডেমোক্র্যাটদের ১৩ শতাংশ সমর্থক বিশ্বাস করেন ‘আজকের দিনে’ রাজনৈতিক সহিংসতা ন্যায্য। কিন্তু ট্রাম্পের ওই গ্রেপ্তার হওয়াকে একদিন গণতন্ত্রের বাঁকবদল হিসেবে স্মরণ করা হবে।

নিউইয়র্কের এই অভিযুক্তির কারণে ট্রাম্প ভবিষ্যতে নির্বাচিত কোনো প্রেসিডেন্টের কাছেই ক্ষমা পাবেন না। শুধু তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন। এই মামলায় অন্তত একটি বেআইনি লেনদেনের সম্ভাবনা সামনে এসেছে। ফলে প্লেবয় পত্রিকার সাবেক মডেল কারেন ম্যাকডুগালের মতো অনেকেরই মত হলো, এ ঘটনায় ট্রাম্প নারী ভোটারদের কাছে আরও অজনপ্রিয় হয়ে পড়বেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পেরুও তাদের ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনার চেষ্টা করছে। যে সপ্তাহে ট্রাম্পের অভিযুক্তি এবং টোলেডোর প্রত্যর্পণ চূড়ান্তকারী রায় ঘোষণা হয়েছে, সেই একই সপ্তাহে পেরুর কৌঁসুলিরা ঘোষণা করেছেন, তাঁরা ভাবী প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদরো কাস্তিলোর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার ব্যয় বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন।

১৯৯০ থেকে এ পর্যন্ত পেরুতে যতজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তার মধ্যে ছয়জন আছেন যাঁদের কেউ হয় জেলে আছেন, নয়তো কেউ জেলে যাওয়ার অবস্থায় আছেন, কেউবা আটকাদেশ মাথায় নিয়ে আছেন।

টোলেডোর প্রত্যর্পণাদেশের চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত পেরুর অনেক মানুষ ধারণা করছিলেন, টোলেডোকে যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা করবে। ঠিক একইভাবে অনেক আমেরিকানেরও বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্পের কখনো বিচার হবে না।

ট্রাম্প এবং টোলেডো মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য একই ধরনের কৌশল নিয়েছেন। তাঁরা দুজনই দাবি করেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ‘অস্ত্র’ বানানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*