কদু আজাদের দুই ছেলে—একাব্বর ও নেকাব্বর। এই তিন নাম শুনেই দর্শকেরা বুঝতে পারছেন যমজ সিকুয়েলের কথা বলছি। নাটকটির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ তিন চরিত্রেই মোশাররফ করিমের অভিনয়। ঈদ সিকুয়েলের মধ্যে বাড়তি আকর্ষণ হয়ে ওঠে ‘যমজ’। শুধু এই নাটকই নয়, ‘আরমান ভাই’, ‘সিকান্দার বক্স’, ‘বরিশাল বনাম নোয়াখালী’, ‘কুদ্দুস’, ‘ঘাওড়া মজিদ’, ‘প্যারা’, ‘বুড়া জামাই’, ‘বাপবেটা’, ‘সুশীল ফেমিলি’সহ অনেক ঈদনাটকের সিকুয়েল নিয়েই দর্শকদের তুমুল আগ্রহ থাকে। ঈদের সেই সিকুয়েলগুলোর খবর কী?
এ পর্যন্ত ১৫টি সিকুয়েল নির্মিত হলেও এখনো দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে ‘যমজ’। দর্শককে আটকে রাখে মোশাররফ করিমের অভিনয়। মোশাররফ–ভক্তদের জন্য এবার দুঃসংবাদ। দর্শকদের কাঙ্ক্ষিত নাটকটি এবার হচ্ছে না। গল্প, কলাকুশলী সব ঠিক থাকলেও হঠাৎ করেই দুর্ঘটনার শিকার নাটকের পরিচালক আজাদ কালাম। গাড়ি দুর্ঘটনায় বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
তিনি বলেন, ‘সব পরিকল্পনা পাকা ছিল। এবার গল্প আমিই লিখছিলাম। আরটিভির সঙ্গেও কথা পাকা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় আমার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আরও কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। অনেক ইচ্ছা ছিল, ঈদের শেষ সময়ে হলেও শুটিং করব। কিন্তু শারীরিক অবস্থা নিয়ে মনে হচ্ছে না পারব। উত্তরার শুটিং হাউস হলেও কথা ছিল, কিন্তু অনেক দৌড়ে যমজ–এর শুটিং করতে হয়। তাই এবার আশা অনেকটাই ছেড়ে দিয়েছি।’
‘যমজ’ ছাড়াও ‘প্যারা’, ‘ঘাওড়া মজিদ’সহ একাধিক ঈদ সিকুয়েলেই মোশাররফ করিমকে দেখা যায়। এবার ঈদের কোনো সিকুয়েলেই তাঁকে দেখা যাবে না। এই অভিনেতা বলেন, ‘দর্শকের আগ্রহের কথা ভেবে কষ্ট হলেও প্রতিবার যমজ নাটকের শুটিং করি। এবারও করার কথা ছিল। কিন্তু পরিচালক অসুস্থ। তাঁর সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে শেষ মুহূর্তেও শুটিংটি করা হবে কি না। না হলে এবার হয়তো দর্শক সিকুয়েলটি পাবেন না। অন্য ব্যস্ততায় ঈদে কোনো ধারাবাহিক করছি না।’
বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাদা–কালো যুগ থেকে ঈদ ধারাবাহিকের ঐতিহ্য। বিটিভিতে তখন ঈদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল আমজাদ হোসেন ও ফরিদ আলীর ‘জব্বার আলী’ সিরিজ। এই জব্বার আলীর কর্মকাণ্ড দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন দর্শক। নাটকটির সিকুয়েল জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯৭৪ সাল থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দুই ঈদে প্রচারিত হয়েছে ‘জব্বার আলী’র সিকুয়েল। পরবর্তী সময়ে বেসরকারিভাবে টেলিভিশন চ্যানেল চালু হলে বিভিন্ন সময় ঈদে সাগর জাহানের ‘আরমান ভাই’, ‘সিকান্দার বক্স’ সিরিজ দর্শকদের মধ্যে আলোচনা তৈরি করেছিল। রেদওয়ান রনির ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’, ‘মানিব্যাগ’সহ অনেক নাটকের সিকুয়েল জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সিকুয়েল নিয়ে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ‘আরমান ভাই’ সিকুয়েল দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, গল্প ও চরিত্র ভালো হলে চ্যালেঞ্জিং সিকুয়েলের চরিত্রে আবার ফিরতে চান।
বাংলাভিশনে টানা ছয় বছর প্রচারিত হয়েছিল মীর সাব্বিরের ‘কুদ্দুস’ সিকুয়েলটি। টানা ৪ বছর ‘আলাল দুলাল’, ‘জামাই’ সিকুয়েল, দুই বছর ‘বরিশাল বনাম নোয়াখালী’ দিয়ে প্রশংসা পেয়েছিলেন এই অভিনেতা। মীর সাব্বির বলেন, ‘এবার শুধু বাপবেটা সিকুয়েল দিয়ে ফিরছি। জনপ্রিয়তা পাওয়া সিকুয়েলে কাজ করতে গিয়ে সব সময় চাপ থাকে। কারণ, দর্শকদের প্রত্যাশা বেশি থাকে। যে কারণে একসঙ্গে খুব বেশি চরিত্রে কাজ করা হয় না।’
বৃন্দাবন দাসের লেখা পরিবারের নানা মজার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কখনো মোঘল ফেমিলি, কখনো সুশীল ফেমিলি ঈদ আয়োজনে আলোচনায় থাকে। গল্পের মিল না থাকলেও নাটকের নামের মিলের কারণে এসব সিকুয়েল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ থাকত। অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি বলেন, ‘সুশীল ফেমিলি নিয়ে গত বছরও আমি ও চঞ্চল অনেক প্রশংসা পেয়েছি। কাজগুলো নিয়ে দর্শকদের মতো আমাদেরও আগ্রহ থাকে। জিটিভিতে নাটকটি প্রচারিত হতো। কিন্তু আমাদের নাটকের পরিচালক দীপু হাজরা আরটিভিতে জয়েন করার কারণে নাটকটি এবার বানানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বসেছিলাম। কিন্তু এক চ্যানেলে চাকরি করে অন্য চ্যানেলে নাটক বানানো হয়ে ওঠেনি। এ জন্য হচ্ছে না।’
করোনার পর থেকেই ঈদ সিকুয়েলগুলো কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইউটিউবের কারণে এখন ধারাবাহিক ও সিকুয়েলের প্রতি টেলিভিশনের কিছুটা অনীহা, জানালেন পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। বউ সিরিজের ‘বউ তুমি কার’, ‘শিক্ষিত বউ’, ‘জামাই আদর’সহ বেশ কিছু নাটক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এবার তিনিও কোনো সিকুয়েল বা ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন না। তিনি বলেন, ‘চ্যানেলগুলো যদি আগ্রহ না দেখায়, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। বাজেট দিতে চায় না, সব মিলিয়ে অনাগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক হয়তো উঠে যাবে।’