বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের আকার গত দুই বছর ধরে ক্রমাগত কমছে। গত বুধবার আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার (২৩.০৬ বিলিয়ন)। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করা হলে রিজার্ভ কমে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের (২২ বিলিয়ন) নিচে নেমে যাবে। এবার জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য সুদসহ ১১০-১২০ কোটি ডলার আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। দুই বছর আগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে রিজার্ভ ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে ধারাবাহিক কমছে রিজার্ভ, যা এখন পর্যন্ত কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম আরও বেড়েছে, যা রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে আমদানিতে ডলার কিনতে হবে আগের চেয়ে আরও ৫০ পয়সা বেশি দামে। কারণ অনেক ব্যাংকসীমার চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।
এতে আমদানি খরচ বাড়বে। এর প্রভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলার সংকটের পাশাপাশি নগদ ডলারের দামও বেড়েছে। এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। দাম বাড়ায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশ ব্যাংক। বেশি দামে ডলার বিক্রির অপরাধে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করা হয়। ফলে মানি চেঞ্জারগুলোয় ডলার কেনাবেচা প্রায় বন্ধ। এতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মুদ্রা বাজারে।
অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি এবং সেটি থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠকে ডলারের দাম আরও এক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তের আলোকে রোববার থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন। আগে পেতেন ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রপ্তানিকারকরা বাড়তি পাবেন ১ টাকা। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সে পাবেন সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আগে পেতেন ১০৯ টাকা। তারা প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বেশি পাবেন। বেশি দামে ডলার কেনার কারণে ব্যাংকগুলোও বেশি দামে বিক্রি করবে। ফলে আমদানিতে ডলারের দামও ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আগে বিক্রি হতো ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এখন তা বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়েছে। কার্ডে মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের জন্য গুনতে হবে ১১২ টাকা। এটা আগে ছিল ১১১ টাকা।