DON'T MISS
Home » Bangladesh » পায়ের রগ কেটে দেওয়ার পরদিন বন্ধুকে ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা’ ছাত্রলীগ কর্মীর

পায়ের রগ কেটে দেওয়ার পরদিন বন্ধুকে ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা’ ছাত্রলীগ কর্মীর

ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী ফেরদৌস (ডানে) ও রবিন সরদারছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বীকে তুলে নিয়ে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। গতকাল রোববার রাতের দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় অপহরণ এবং মারধরের অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপহরণের শিকার ছাত্রের নাম মো. ফেরদৌস (২৭)। তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কাপাসিয়া উপজেলার ভেঙ্গুরদী গ্রামে। তাঁকে তুলে নেওয়া কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীর নাম রবিন সরদার। তিনি বদরে আলম কলেজের স্নাতক শেষ বছরের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইর মোল্লাকান্দি গ্রামে। ফেরদৌস ও রবিনের মধ্যে একসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। ঘটনার পর সোমবার দুপুরে রবিন সরদার ফেরদৌসকে তাঁর ফেসবুক থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রবিন সরদার ও ফেরদৌস একসঙ্গে চলাফেরা করতেন ও ছাত্রলীগের রাজনীতির করেন। তবে তাঁদের কোনো দলীয় পদ নেই। কলেজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়।

সহপাঠীদের বর্ণনায় জানা যায়, রোববার দুপুরে কলেজের সামনে ফেরদৌস অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় রবিন সরদারের নেতৃত্বে একটি গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। পরে বিকেলে কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেরদৌসকে দ্রুত উদ্ধার এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পুলিশ ছাত্রদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এর মধ্যে ফেরদৌসের মায়ের কাছে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানান ফেরদৌসের মা। পুলিশ রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জয়দেবপুর শিববাড়ী মোড় এলাকা থেকে ফেরদৌসকে উদ্ধার করে।

আহত ফেরদৌস বলেন, ‘ভাওয়াল কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হওয়ায় রবিন সদর আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়। চাকু দিয়ে আমার পায়ের দুটি রগ কেটে দিয়েছে। আমার মোবাইল ও ফেসবুক সবকিছুর পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয়। পরে আমার ফেসবুক থেকে পোস্ট করে, “বন্ধু জীবনে অনেক বেইমানি করছি, অনেক স্বার্থপরতামি করছি আমারে মাফ কইরা দিয়ো। আগের মতো বন্ধু হইয়া থাকমু সারা জীবন। আর ভুল করমুনা কোনো সময়…”।’ এরপর আজকে (সোমবার) দুপুর রবিন সরদার ফেসবুক পোস্ট দিয়ে আমাকে জন্মদিনের শুভচ্ছা জানিয়েছে। রবিন সরদার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করায় আমি তার কাছ থেকে সরে এসেছিলাম। যার কারণে সে আমাকে ধরে নিয়ে মারধর করেছে।’

ঘটনার বিষয়ে রবিন সরদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদা সিকদার বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ফেরদৌসকে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পর রাতেই পুলিশ গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় করা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফেরদৌসের মা নাজমা বেগমের করা মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কলেজশিক্ষার্থীরা জানান, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি নেই অনেক বছর ধরে। এ সময় রবিন সরদার ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তাঁর নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলে। রবিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাঁকে কয়েকবার জেল খাটতে হয়েছে। একসময়ের বন্ধু ফেরদৌস প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ানোয় তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন রবিন।

ফেরদৌসের বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ফেরদৌসের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বাঁ পায়ের একটি রগের আংশিক কেটে গেছে। তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*