রোদের খরতাপ থেকে বাঁচতে হাতে যা আছে তা দিয়েই মাথা ঢাকার চেষ্টা পথচারীর।
একদিকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, অন্যদিকে সারা দেশজুড়ে আবারও তাপপ্রবাহ। মাঝেমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী-বৃষ্টিও চলছে। এর মধ্যে বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ জীবন অতিষ্ঠ করা গরমে কষ্ট পাচ্ছে। দুই দিন আগে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ আজ সোমবার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চারটি জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আজ ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত ৩৪ বছরের মে মাসের রেকর্ড ছুঁয়ে গেছে। আর সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৯ বছরের রেকর্ড ছুঁয়ে গেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী দু-তিন দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস এপ্রিলের পর মে মাসে সারা দেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। এবার এপ্রিল অন্য বছরগুলোর তুলনায় বেশি উষ্ণ থাকার পর মাসের শেষের দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এতে তাপমাত্রা বেশ কমে গিয়ে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু এবার মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারও তপ্ত দিন শুরু হয়ে যায়। আজ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৮৯ সালের ৮ মের পর মে মাসের কোনো দিনে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ওই দিনই ঢাকায় এই তাপমাত্রা হয়েছিল।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ক্ষেত্রেও গত ৯ বছর আগের রেকর্ড ছুঁয়েছে। আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে যশোরে ওই একই তাপমাত্রা উঠেছিল। স্বাধীনতার পর মে মাসে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ১৯৯৫ সালের ২৮ মে যশোরে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশে আগামীকাল মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরেক দফা বাড়তে পারে। সারা দেশের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু–গবেষক বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, গত এপ্রিলের মতো চলতি মে মাসেও একের পর এক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হতে দেখা যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা বেড়ে দেশের উষ্ণতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় বেশির ভাগ মেঘ সেখানে চলে গেছে। ফলে দেশের আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার হয়ে ওঠায় টানা সূর্যের কিরণ আসছে। এতেই আবারও দাবদাহ শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি মঙ্গলবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি আগামী ১১ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার উপকূলের দিকে এগোতে পারে। তবে এটি উপকূলে আঘাত করবেই, এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে বলতে চাইছেন না আবহাওয়াবিদেরা।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, লঘুচাপটি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উপকূলের দিকে আসতে পারে। এটি বাংলাদেশের দিকেও আসার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের দিকে আসবেই, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, আজ সারা দেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সেখানকার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।