রাজশাহীতে ঘুসের ১০ লাখ টাকা গ্রহণের সময় আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই কর্মকর্তার নাম মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি রাজশাহী কর কমিশনারের কার্যালয়ের সার্কেল-১৩ (বৈতনিক)-এর উপ-কর কমিশনার।মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা যখন মহিবুল ইসলামের কক্ষে অভিযান চালাচ্ছিলেন তখন আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। সেখানে দুদক কর্মকর্তা এবং আয়করের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়।পরে দুপুর আড়াইটার পর পুলিশের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যান। মহিবুল ইসলামকে যখন বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।আয়কর অফিসের এক কর্মকর্তার দাবি, অভিযান চালানোর সময় দরজা বন্ধ করে তাকে মারধর করা হচ্ছিল। চিৎকার শুনে তারা গিয়ে জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখেন।এ সময় অফিসের সবাই মনে করেন, বাইরে থেকে সেবা নিতে আসা কোনো লোকজন তাকে মারধর করছেন। কারণ দুদক কর্মকর্তারা সবাই সাধারণ পোশাকেই ছিলেন। তাই দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তারপর কর্মকর্তারা ‘দুদক’ লেখা জ্যাকেট পরলে তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হন। এর মধ্যেই রাজপাড়া-থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে চলে আসে।দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের নয়জন কর্মকর্তা এ অভিযান চালান। অভিযান শেষে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেন যে, কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম তার কাছে ঘুস দাবি করছেন। চাহিদামতো ঘুস না দিলে তিনি মোটা অংকের করারোপ করার ভয় দেখাচ্ছেন।ডা. ফাতেমা দুদককে আরও জানান যে, তার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে মঙ্গলবার ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কথা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা সিদ্দিকা তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মহিবুল ইসলামের দপ্তরে যান এবং ঘুসের ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা নিয়ে মহিবুল ইসলাম তা ড্রয়ারে রাখেন। তখন দুদক কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে টাকা উদ্ধার করেন।এ ব্যাপারে মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুদক আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।আয়কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মারধর করিনি। আয়কর অফিসের কর্মীরাই ঘরে ঢুকে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করেন। তখন আমরা দরজা বন্ধ করে দেই। তারপর তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আক্রমণ করেন। মারামারি নয়, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে মহিবুল ইসলামের গলায় একটা আঁচড় লেগেছে। ধস্তাধস্তির কারণে আমাদেরও তিনজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।আয়কর অফিসেই সাংবাদিকরা ডা. ফাতেমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে তিনি কথা বলেননি। মহিবুল ইসলামকে আটক করে দুদক কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।পুলিশের সহায়তায় আয়কর অফিস থেকে বের করে গাড়িতে তোলার সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা আছে তিনি তার চেয়েও বেশি টাকার জমি কিনছেন। তার ২৬ কোটি টাকার আয়করের গরমিল আছে। এজন্য তার কাছ থেকে আয়কর আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এজন্য তাকে ফাঁসানো হয়েছে।মহিবুল ইসলাম দাবি করেন, অভিযানের সময় ডা. ফাতেমা সিদ্দিকাও ছিলেন। তিনি টাকা এনে রেখেছেন। আর ডা. ফাতেমা যখন আসেন, তখন তিনি অফিসের ভেতরে ছিলেন না। পরে তাকে অফিসের বাইরে থেকে জোরপূর্বক কক্ষের ভেতরে ঢোকানো হয়েছে।যদিও মহিবুল ইসলামের এ বক্তব্যের সঙ্গে কর কমিশনার মো. শাহ আলীর বক্তব্য মিলছে না। মো. শাহ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিযানের বিষয়টি দুদকের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক তাকে জানিয়েছিলেন এবং সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়ে দুদক কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এরপর অফিসে আর কী হয়েছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।তবে মহিবুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে মো. শাহ আলী বলেন, দুদক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এটা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এখন যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।