DON'T MISS
Home » UK NEWS » Bangladesh politics » Politics » International news » শিখ নেতা হত্যা নিয়ে উত্তেজনা : সরাসরি ভারত সরকারকে দায়ী করলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, কূটনীতিক বহিষ্কার

শিখ নেতা হত্যা নিয়ে উত্তেজনা : সরাসরি ভারত সরকারকে দায়ী করলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, কূটনীতিক বহিষ্কার

7727_IMG_5996.jpeg

শিখ নেতা হরদীপ প্রসাদ নিজার হত্যাকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হরদীপ সিং নিজার একজন কানাডিয়ান নাগরিক। তাকে হত্যার নেপথ্যে সরাসরি ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। হত্যার বিষয়টি তিনি সদ্যসমাপ্ত জি-২০ বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে উত্থাপন করেছিলেন। এবার সরাসরি নিজার হত্যায় ভারত সরকারকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, এই হত্যার নেপথ্যে থাকতে পারে ভারত।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কানাডা থেকে ভারতের একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। 

বৃটিশ কলাম্বিয়ায় (বিসি) গত ১৮ই জুন শিখদের উপাসনালয় গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারের কার পার্কিংয়ে সন্ধ্যায় গুলি করে হত্যা করা হয় শিখ নেতা নিজারকে। তাকে হত্যা ও ভারত রাষ্ট্রের মধ্যে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ যোগূসূত্র খুঁজে পেয়েছেন কানাডার গোয়েন্দারা। এ তথ্য জাস্টিন ট্রুডোর। তিনি বলেছেন, আমি এ ইস্যুটি সম্প্রতি জি-২০ সামিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে উত্থাপন করেছি। 

হাউস অব কমন্সে সোমবার ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে দেশটির কোনো নাগরিককে হত্যায় বিদেশি একটি সরকার জড়িত থাকলে তা আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।

মুক্ত, অবাধ ও গণতান্ত্রিক সমাজে নিজেদের পরিচালনা করার যে মৌলিক নিয়ম আছে এটা তার পরিপন্থি। 

এর আগে হরদীপ প্রসাদ নিজার হত্যায় জড়িত থাকার যেকোনো রকম অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারত। এ নিয়ে উত্তেজনায় সোমবার কানাডায় নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিক পবন কুমার রাইকে বহিষ্কার করেছে কানাডা। ট্রুডোর বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। তিনি বলেন, এই মামলাটি তদন্তাধীন। তাই এ নিয়ে প্রকাশ্যে খুব সীমিত কথাবার্তাই বলতে পারেন কানাডার কর্মকর্তারা। এর আগের তদন্তকারীরা বলেছেন, ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ প্রসাদ নিজার হত্যাকাণ্ড ‘টার্গেটেড ইনসিডেন্ট’। 

আগেই বলা হয়েছে জুনের এক সন্ধ্যায় সারে’তে অবস্থিত গুরু নানক শিখ গুরুদুয়ারের কার পার্কিং এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে হরদীপ প্রসাদ নিজারকে। এটি পূর্বাঞ্চলীয় ভ্যানকোভারের একটি শহর। ওই সন্ধ্যায় একটি গাড়িতে মুখোশ পরা দু’ ব্যক্তি তাকে গুলি করে। হরদীপ প্রসাদ নিজার হলেন বৃটিশ কলম্বিয়াতে প্রথম সারির একজন শিখ নেতা। তিনি প্রকাশ্যে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রচারণা চালিয়েছেন। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছেন শিখরা। কানাডায় এর নেতৃত্বে ছিলেন হরদীপ প্রসাদ নিজার। তার সমর্থকরা বলেছেন, আগে থেকেই তাকে টার্গেট করার হুমকি দেয়া হয়েছে। এর আগে স্বাধীনতাকামী শিখদের এই গ্রুপকে একটি মিলিট্যান্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ হিসেবে আখ্যায়িত করে হরদীপ প্রসাদ নিজারকে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ভারত। তবে তার সমর্থকরা এই ঘোষণার কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতের উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এই হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছেও উত্থাপন করেছেন এই ইস্যুটি। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, এই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করতে কানাডা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবে ভারত সরকার। তিনি আরও বলেন, নিজার হত্যাকাণ্ডে কানাডার নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। 

ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন সহ কানাডার কিছু শিখ গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে এরই মধ্যে যা বিশ্বাস করে তাই নিশ্চিত করেছেন ট্রুডো। কানাডায় ১৪ থেকে ১৮ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ আছেন। ভারতের পাঞ্জাবের বাইরে বিদেশে কোনো একটি দেশে সবচেয়ে বেশি শিখের সংখ্যা কানাডায়ই। 

এর আগে ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে। তাতে যোগ দিয়েছিলেন ট্রুডো। সেখানে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যামান ছিল। বৈঠকে মোদি সমালোচনা করেছেন কানাডার। তিনি বলেছেন, কানাডার ভিতরে উগ্রপন্থিদের ভারতবিরোধী তৎপরতা থামাতে যথেষ্ট করছে দেশটি। এর মধ্য দিয়ে তিনি সেখানে শিখদের খালিস্তান আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। পক্ষান্তরে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতা স্থগিত করেছে কানাডা। কেন এটা করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা না দেয়া হলেও ভারত বলেছে সুনির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক কারণে এটা করা হয়েছে। 

সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে তিনজন শিখ নেতা মারা গেছেন। তার মধ্যে নিজার হলেন তৃতীয় জন। এর আগে জুনে বৃটেনের বার্মিংহামে খালিস্তান লিবারেশন ফোর্সের প্রধান অবতার সিং খাণ্ডা নিহত হয়েছেন। এই মৃত্যুকে রহস্যময় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মে মাসে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে গুলি করে হত্যা করা হয় পরমজিৎ সিং পানঞ্জওয়ারকে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*