দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে নিশ্চিত জীবনযাপনে এক যুগ ধরে সরকারি চাকরি ছিল পছন্দের শীর্ষে। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ভর্তির পরপরই একাডেমিক বই বাদ দিয়ে বেছে নিতেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। বলতে গেলে দেশের নব্বই শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশীই ছিল বিসিএস জ্বরে আক্রান্ত। যদিও বছরে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীই বিসিএস ক্যাডার হিসেবে উত্তীর্ণ হতে পারেন। গত দেড় থেকে দুই বছরে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে অধ্যয়নরত তরুণদের ভাবনায়। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এখন পড়াশোনা শেষে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক দশক ধরে এই হার বৃদ্ধির দিকেই ছিল। তবে গত এক বছরে উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রার হার অনেক বেশি। অনেকেই বলছেন উচ্চশিক্ষায় বিদেশযাত্রায় একটা নীরব বিপ্লব হয়ে গেছে দেশে। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির সূত্র বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় বিদেশগমনের হার প্রায় দ্বিগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ালেও মানসম্মত শিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক নিশ্চয়তা, সামাজিক সুরক্ষার অভাব, দেশে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। এসব শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলেও পরবর্তী সময়ে সেখানেই স্থায়ী হচ্ছেন। ফলে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য কী পরিমাণ শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশ ছাড়েন—এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইউনেস্কো। ২০২২ সালে প্রকাশিত ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন। ২০২১ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪৪ হাজার ২৪৪ জন, ২০২০ সালে ৫০ হাজার ৭৮, ২০১৯ সালে ৫৭ হাজার ৯২০ এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ১৯১ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।