টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) ক্ষমতায় আসা রুখে দিতে চায় বিরোধী দলগুলো। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ লক্ষ্য সামনে রেখে তারা গঠন করেছে বিরোধী রাজনৈতিক জোট। এতে যোগ দিয়েছে কমপক্ষে ২৮টি দল। তাদের এই জোটের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ এলায়েন্স’ (আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া)। শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
নরেন্দ্র মোদির পক্ষে যেসব রাজ্যে ভোট ভাগ হয়ে চলে যায়, সেখানে আসন শেয়ারিং নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে জোট ইন্ডিয়া। অর্থাৎ বিভক্ত যে ভোট পান মোদি বা তার দল, তাকে এবার আটকে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে জোট। ইন্ডিয়ার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইন্ডিয়া জোটে আমরা সব দল আসন্ন লোকসভা নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। এজন্য বিভিন্ন রাজ্যে আসন শেয়ারিং চুক্তি হয়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভারতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে আগামী মে মাসে।
বিরোধী অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের নেতা সোনিয়া গান্ধী, তার পুত্র রাহুল গান্ধী।
এর সঙ্গে আছেন শারদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সীতারাম ইয়েচুরি, লালু প্রসাদ যাদবের মতো বর্ষীয়াণ রাজনীতিক প্রমুখ। এ নিয়ে ভারতের আর্থিক ও বিনোদনের কেন্দ্র মুম্বইয়ে দু’দিনের মিটিং হয়েছে নেতাদের মধ্যে। বিরোধীদের এই ঐক্যমতের ফলে বিজেপি প্রতিটি আসনে যেসব প্রার্থী দেবে, তাদেরকে বিরোধী সব দলের একজন মাত্র প্রার্থীর মুখোমুখি হতে হবে। ফলে এবার বিরোধী দলের নির্বাচনী কৌশলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
বিরোধী দলগুলো জুনে জোট গঠন করে। তারপর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের অর্থনৈতিক রেকর্ড, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দেশের ভিতরে অন্য নানা সমস্যা এবং মুসলিম বিরোধী যে সেন্টিমেন্ট আছে, তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তারা। দু’দিনের মিটিং শেষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তাতে তিনি বলেন, এসব বার্তা পৌঁছে দিতে আমরা বিভিন্ন স্থানে সফর করবো। এই মিটিংয়ে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারে যারা আছেন, তারা অবশ্যই পরাজিত হবেন। এর মধ্য দিয়ে মিডিয়ার স্বাধীনতায়ও নিশ্চয়তা দেয়া হবে। আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করবো।
কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে এক্সে টুইট করে বলেন, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক সহ সমাজের সব অংশই বিজেপির ‘কর্তৃত্ববাদী অপশাসনের’ ইতি চায়। ৯ বছর ধরে বিজেপি এবং আরএসএস সাম্প্রদায়িতকার যে বিষ প্রয়োগ করেছে, তাকে দেখা হচ্ছে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ হিসেবে। এই অপরাধ ঘটানো হচ্ছে ট্রেনের যাত্রীদের ওপর, স্কুলের নিরাপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর।
রিপোর্ট বলছে, আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ হলো উগ্র ডানপন্থি হিন্তু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। গঠিত হয়েছিল ১৯২৫ সালে। ইউরোপে যেমন ফ্যাসিস্ট গ্রুপ তৈরি হয়েছিল, তাদের মতো করেই এটি গঠন করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ভারতকে একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বানানো।
তবে বিরোধী দলগুলোর শুক্রবারের ওই মিটিংয়ের কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। বলেন, তাদের এই জোট লোক দেখানো। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের প্রচণ্ড বিরোধিতা দেখা দেবে।
ওদিকে বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব অভিযোগ করেছেন যে, মোদি সরকার নিয়ন্ত্রিত ফেডারেল এজেন্সিগুলো বিরোধী দলীয় নেতাদের টার্গেট করে তল্লাশি ও অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিজেপির এমন আচরণে বিরোধী দলের কিছু নেতা দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং অন্যান্য চাপ শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বিজেপি।