বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরকার পতনের একদফা দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার শপথ নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলটি বলছে, বিএনপি’র লক্ষ্য একদফা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। গণআন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারকে উৎখাত করা হবে। আমরা শপথ নিচ্ছি, গুলি খাবো, জেলে যাবো, এই সরকারকে উৎখাত করেই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।
গতকাল বিকালে বিএনপি’র ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ফকিরাপুল মোড়, নটর ডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড় হয়ে রাজধানী মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। এরআগে বিকাল ৩টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শুরু হয়। এতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় জনতার ঢল নেমেছে।
এই ঢল অব্যাহত থাকবে। কারণ আজকে ঢাকার মানুষ নেমে এসেছে। তারা এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও দেখতে চায় না। তাই প্রস্তুতি নিন। রাজপথেই ফয়সালা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য একদফা আন্দোলন। একদফা আন্দোলনের মাধ্যমে আজকে দেশে যে একদলীয় স্বৈরাচারী সরকার ১৮ কোটি মানুষের ওপর চেপে বসেছেন তাদের বিদায় নিতে হবে। এটাই আমাদের একদফা আন্দোলন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে নাই। আজকে তারা দেশে গায়ের জোরে মানুষের ওপর হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন এবং খুন-গুম করে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ সেটা হতে দেবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মঈন খান বলেন, আমরা রাজপথে নেমেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দিয়ে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আমরা তাকে মুক্ত করে আনবো। আর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কর্মসূচি অনুসরণ করে রাজপথে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারকে বিদায় দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র উৎসব- তা নয়, এটা বাংলাদেশের উৎসব। কেন উৎসব? এই দল সৃষ্টি হয়েছে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। বাকশালীরা এই ভোটাধিকবার কেড়ে নিয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান এই দল সৃষ্টি করেছিলেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, আইনের শাসন ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এবং বাক-স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। সুতরাং এই দলের সৃষ্টি হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। আর আজকের গণতন্ত্র লড়াইয়ের অন্তরায় হচ্ছে, এক নম্বর হচ্ছে- আওয়ামী লীগের দলীয় পুলিশ বাহিনী। এদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আরেকটি অন্তরায় হচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী বিচারক লীগ। এরা হচ্ছে গণতন্ত্রের আরেকটি অন্তরায়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা এই সরকারের পরিবর্তন চাই। দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেজন্য একদফা দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।
সরজমিন দেখা গেছে, বেলা ২টায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করে। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মসূচির প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন তারা।
সরজিমন দেখা গেছে, শোভাযাত্রায় নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ফেস্টুনসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঘোড়ার গাড়িও ছিল। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র বিভিন্ন ইউনিটসহ দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসেন দলে দলে। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে নয়াপল্টনসহ ফকিরাপুল মোড়, নটর ডেম কলেজ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী মার্কেটের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলেন। পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়।
শোভাযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক। এতে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।