সরকারের কোনো ধরনের রাজনৈতিক শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নিতে রাজি নন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সরকার যদি নিঃশর্তভাবে অনুমতি দেয় তাহলেই বিদেশে যেতে চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএনপি’র একাধিক সিনিয়র নেতা। এদিকে বিদেশের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে খালেদা জিয়ার পরিবার। সরকার যদি আজ অনুমতি দেয় তাহলে আগামীকাল সোমবারই তাকে বিদেশে নিতে চান পরিবারের সদস্যরা। ইতিমধ্যে পরিবারের তরফে সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত রোববার জানানো হবে। এদিকে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে এখন যে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আবার তাকে জেলে যেতে হবে, আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলটির শীর্ষ নেতারা এখনো সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।
তাদের বিশ্বাসÑ বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিল অবস্থা বিবেচনায় রোববার হয়তো সরকার অনুমতি দিতে পারে। দ্রুত যাতে তাকে বিদেশে নেয়া যায় সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এয়ার এম্বুলেন্সে অগ্রিম বুকিংও দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও জার্মানির কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে যারা যাবেন তাদের ভিসার আবেদনের কাগজপত্রও প্রস্তত করে রাখা হয়েছে।
গত ৯ই আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। ৫২ দিনেও তার স্বাস্থ্যের তেমন কোনো উন্নতি নেই। মাঝে-মধ্যেই তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। নিতে হচ্ছে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। সর্বশেষ শুক্রবার বিকালেও তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর ফের কেবিনে নেয়া হয়। লিভার সিরোসিসের কারণে তার পেটে পানি চলে আসছে। সেটা বের করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ম্যাডামের পেটের পানি বের করার জন্য কেবিন থেকে সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। পানি অপসারণের পর ফের তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির জন্য রাজনৈতিক কিছু শর্ত দিতে চায়। এ ছাড়া চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করে দিতে চায়। সেক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিংবা এশিয়ার কোনো দেশে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু বিএনপি চায় যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অস্ট্রেলিয়া।
ওদিকে শুক্রবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনদফা বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার অনুমতি দিতে শর্তের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা শর্তের বিষয়ে জানতে চান। তখন বিএনপি নেতারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নিতে রাজি নন।
সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কোনো শর্ত মেনে বিদেশে যাবেন না। তাহলে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়েই তিনি বিদেশে যেতে পারতেন। বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান তিনি।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। তার মুক্তি মানে হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে কোনো শর্ত খাটে না। এ ছাড়া শর্ত মানা বেগম খালেদা জিয়ার অতীতের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেও যায় না। আমরা নিঃশর্তভাবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা চাই।
জার্মানি বিএনপি’র সভাপতি আকুল মিয়া জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবার থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমাকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। তারা সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। সরকার অনুমতি দিলে ম্যাডামকে জার্মানির বার্লিনে নেয়া হতে পারে।