এই শোক তাঁরা কীভাবে কাটিয়ে উঠব
ঢাকা
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮: ২৫
ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শিশুদের কয়েকজন
ক্রিকেট ব্যাট, আঁকা ছবি, ইস্তিরি করা স্কুলের পোশাক, পুতুল—সবই তো আছে। শুধু এক মশার কামড়ে চোখের সামনে থেকে সন্তানেরা হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গুতে সন্তান হারানো মা–বাবা মেনে নিতে পারছেন না দুই দিন আগেও যে ছেলে বা মেয়ের দুরন্তপনায় ঘর মুখর ছিল, আজ সেই ঘরে শুধুই নীরবতা। প্রাণহীন ঘরে মা–বাবা টিকতে পারছেন না। স্বামী কেন সন্তানকে আরও আগে চিকিৎসকের কাছে নিলেন না বা স্ত্রী কেন মশারি টাঙাতে গাফিলতি করলেন—এমন নানা বিষয় নিয়ে সন্তানহারা মা–বাবার সম্পর্কে মনোমালিন্যও দেখা দিচ্ছে। তবে তাঁরা এটাও বুঝতে পারছেন, এই যে দোষারোপ, তা শুধুই সান্ত্বনা খোঁজার জন্য।
দেশে এ বছর ডেঙ্গুতে এরই মধ্যে ১৫ বছর ও এর কম বয়সী ১০২টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া বেশ কয়েকটি শিশুর মা–বাবার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা মশা মারার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সন্তান মারা যাক, তা কখনো চান না। তবে যাঁদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাঁরা সন্তান হারিয়েছেন, তাঁদের ক্ষমা করতে পারছেন না তাঁরা। হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা, আবার চিকিৎসা–সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় সন্তান হারানোর বিষয়টি এই বাবা–মায়েরা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তাঁরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কে কী বলছেন, কী করছেন, সেগুলো সবই তাঁরা দেখছেন।
সন্তানহারা বাবা-মায়েরা জানিয়েছেন, সন্তানের জীবন বাঁচাতে তাঁদের কেউ কেউ হাসপাতালে লাখ লাখ টাকা বিল দিয়েছেন। কিন্তু সন্তান বাড়ি ফেরেনি। ঋণ বা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা এ টাকা পরিশোধ করতেও অনেক পরিবারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দুই মেয়রসহ রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ সন্তান হারানো বাবা-মায়েরা।
যে ছেলে বা মেয়ে পেছন থেকে চুপিচুপি এসে মাকে চমকে দিতে মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ করত, সেই সন্তান এখন আর নেই। শুধু এক এডিস মশার কামড়ে তারা এই পৃথিবী থেকে চলে গেছে। সন্তানহারা বাবা–মায়েরা বলছেন, তাঁদের সারা জীবন সন্তানের জন্য বিলাপ করে কাটাতে হবে। তাঁদের এই বিলাপের অর্থ ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যরা বুঝতে পারবেন না। আর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তো তা বুঝতেই চাচ্ছেন না। একদিকে মশা মরছে না, অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে নানা অব্যবস্থাপনা চলছেই।
এক মা অনেকটা আক্ষেপ করেই বললেন, মশা মারার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো সন্তান মারা গেলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নয়নে কিছু একটা করার চেষ্টা করতেন। তবে এই মা পরক্ষণেই তাঁর কথা ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, কোনো শত্রু, তার আর যা–ই হোক, সন্তানহারা যাতে না হতে হয়।
অনেক মা–বাবা নিজেদের মনকে শান্ত করার জন্য বলছেন, সৃষ্টিকর্তা সন্তানের হায়াত এটুকু দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য সন্তান যে কষ্টের মধ্য দিয়ে মারা গেল, তা তো মেনে নেওয়া যায় না।