ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ বিবিসিকে বলেছেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ না করলেও সারাবিশ্বের কাছে তিনি একটি আইকনিক ফিগার হয়ে উঠেছেন। এতে গভীরভাবে বিরক্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ কেউ মনে করেন, জাতির পিতা প্রয়াত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেয়ে ড. ইউনূসের সুখ্যাতি উপরে উঠে যাচ্ছে, এ জন্য আতঙ্কিত শেখ হাসিনা। তার পিতাকে বাংলাদেশিরা ভীষণ সম্মান করেন। কারণ, তিনি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে।
প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত আক্রমণ এটাই ইঙ্গিত করে যে, তারা ভিন্নমতের প্রতি ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। দেশ যে গণতান্ত্রিক মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এটা তার ওপর হুমকি। (ইউনূসের বিরুদ্ধে) আকস্মিক মামলার পাহাড় এবং দ্রুত বিচার করার যে প্রবণতা তা এটাই ইঙ্গিত করছে যে, সুষ্ঠ ও ন্যায়বিচার লক্ষ্য নয়। বরং এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হলো একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা। তিনি আরও বলেন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে একইরকম আচরণ করা হচ্ছে প্রতিদিন।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেছেন বিশ্বের কমপক্ষে ১৭০ জন নেতা।
প্রফেসর ইউনূস বিশ্বজুড়ে পরিচিত গরীবের ব্যাংকার হিসেবে। তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে চপেটাঘাত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতেও আরও মামলা হয়েছে। বিশ্বনেতাদের খোলাচিঠিতে এটাকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ চিঠির জবাব কড়া ভাষায় দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ৮৩ বছর বয়সী ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে তার পক্ষে বিবৃতি ভিক্ষা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্ববাসী, বিশেষ করে পশ্চিমা নেতারা ড. ইউনূসকে যেখানে ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তক হিসেবে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন, তখন শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে তাকে জনগণের শত্রু বলে মনে করেন। বার বার তিনি প্রফেসর ইউনূসকে গরীরের রক্তচোষা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন অতিরিক্ত হারে সুদ নেয়ার।
১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক চালু করেন ড. ইউনূস। এর মধ্য দিয়ে অসহায় দরিদ্রদেরকে ছোট ছোট ব্যবসায় নিয়োজিত করতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেন। তারপর থেকে তার এই ধারণা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
সেই ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার ইস্যুতে বিশ্বনেতারা ওই খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্রানসন, ইউটু-এর লিড সিঙ্গার বোনো। তারা বলেছেন, ড. ইউনূসকে বিচারিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
যখন বাংলাদেশে সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকার ছিল তখন ২০০৭ সালে নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইউনূস। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে, তখন তিনি ছিলেন জেলে বন্দি। তবে প্রফেসর ইউনূস তার সেই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হননি। পরে বলেছেন, রাজনীতি আমার জন্য নয়।