দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আরও জোরালো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ‘পুরোদমে নির্বাচনি যাত্রা’ শুরু করতে যাচ্ছে দলটি। এরই অংশ হিসাবে মাসের প্রথম দিনেই ছাত্র সমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ছাত্রলীগ।
এর পরদিন ২ সেপ্টম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের উদ্বোধন ঘিরেও মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি জানান দেবে দলটি। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প অর্থাৎ মেগা প্রজেক্টের উদ্বোধন ঘিরেও কয়েকটি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনি যাত্রার অংশ হিসাবে খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ হবে। জেলা পর্যায়েও পালিত হবে এসব কর্মসূচি।
এর বাইরে ঢাকাসহ সারা দেশে ছাত্র সমাবেশ, সুধী সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা ও সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে দল ও সহযোগী সংগঠনের। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বাচনি প্রস্তুতির পাশপাাশি সংগঠনকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করা হবে। একই সঙ্গে, বিএনপি-জামায়াতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় প্রত্যেকটি কর্মসূচির দিন নানা বিষয় সামনে এনে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও। ১৪ দলীয় জোটের শরিকসহ সমমনা অন্যান্য দল ও সংগঠনকেও মাঠে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচন পর্যন্ত তাদের এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, গত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের তিনটা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা এবং নিদেজের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো দূর করা। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, হত্যা, নির্যাতনের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা। আর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কি উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরা।
তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো সামনে রেখে আমরা আগস্টজুড়ে কাজ করেছি। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর আমাদের এ কার্যক্রম চলবে। এর মধ্যে ২ তারিখে আমাদের ঢাকা বিভাগীয় সভা হচ্ছে। এভাবে প্রতিটা বিভাগে একটা করে সভা হবে। পরে জেলা পর্যায়েও আমরা সভা করব।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে গণতন্ত্রের পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। আমরা আমাদের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে জানাতে চাই ও সম্পৃক্ত করতে চাই। শোকের মাসের কর্মসূচি হলেও ছাত্র সমাবেশ ঘিরে সারা দেশের তরুণ সমাজকে আরও আগ্রহী করা এবং দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। ২ তারিখে সুধী সমাবেশ হবে। এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের সুফল ঢাকাসহ দেশবাসী পাবে। এই বিষয়গুলো আমরা জণগণের সামনে তুলে ধরতে চাই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এমন ধারণা থেকেই দলের হাইকমান্ড একাধিকবার দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘অতীতে বিএনপি নেতারা সহিংস কর্মকাণ্ড করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি করেছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী নির্বাচনমুখী দল। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস করে এবং ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। নির্বাচন সামনে রেখে অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবিলার লক্ষ্যে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো অব্যাহত আছে। এটা নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
প্রতি বছরই আগস্টের ৩১ তারিখে শোক দিবসের বিশেষ সভার আয়োজন করে থাকে ছাত্রলীগ। তবে এবার শোক দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্র সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। ৩১ অগাস্ট এই সমাবেশ করার পরিকল্পনা প্রথমে নিলেও কর্মদিবসে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি এড়াতে তা ১ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ৩টায় এই ছাত্র সমাবেশ হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে নির্বাচনের আগে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিতে এতে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী সমাগম করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। সমাবেশকে সার্থক করার জন্য দেশব্যাপী চালানো হয়েছে প্রচারণা। সমাবেশে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নেওয়া ইউনিটকে পুরস্কৃত করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই ছাত্রসমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় উপহার দেওয়ার শপথ নেবে বলেও জানান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ছাত্র সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে। জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালী জেলা থেকে তিন হাজার লোক লঞ্চে আর বাকি পাঁচশ লোক বাসে ঢাকায় যাবে।
সমাবেশের অভ্যর্থনাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব সবুর খান কলিন্স বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছে যে-সমাবেশে আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী সমবেত হবে। যেটি নতুন ইতিহাস তৈরি করবে বাংলাদেশে।
বুধবার বিকালে প্রস্তুতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে একটি উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ছাত্রলীগের সমাবেশের পরের দিন ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হবে সুধী সমাবেশ। এছাড়া ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে সুধী সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে মেট্রোরেলের উদ্বোধন, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প, কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ নির্মাণ, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ এবং আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব উদ্বোধন উপলক্ষ্যেও বড় গণজমায়েত ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ।