মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শিক্ষক থেকে হয়েছেন রাজনীতিবিদ। এরপর পৌরসভার চেয়ারম্যান, এমপি, প্রতিমন্ত্রী। প্রায় এক যুগ ধরে সামলাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব। কিন্তু দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতি কোনো কালিমাই লাগেনি তার গায়ে। বক্তৃতা-বিবৃতিও দেন শালীন ভাষায়। কথাও বলেন মেপে। পরিচিতি পেয়েছেন একজন পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে। গত ২৪শে আগস্ট চিকিৎসা নিতে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর গেছেন মির্জা ফখরুল। এরপর থেকেই বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে একের পর এক অপপ্রচার।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা সহায়তা নিয়ে তিনি সিঙ্গাপুর গেছেন- এমন প্রচার চালানো হচ্ছে। একটি বানোয়াট চেকের ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল করেছে একটি মহল। ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রী রাহাত আরার ছবির সঙ্গে একটি চেকের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের চেকটিতে তারিখ দেয়া হয়েছে ২০শে আগস্টের। আর টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ লাখ। দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক এটি। তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ‘রিউমার স্ক্যানার’ তাদের ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুলের বিদেশ ভ্রমণ দাবিতে ভাইরাল চেকটি ভুয়া।’ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বরের মিল না থাকাসহ একাধিক কারণ দেখিয়ে চেকটিকে ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভুয়া চেক ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এটা নোংরামি ছাড়া আর কিছু নয়। মির্জা ফখরুল বাপের জমি বিক্রি করে চিকিৎসা ও রাজনীতি করে। আমাকে কেনা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বিরোধী রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের এক জঘন্য খেলায় মেতেছে সরকার। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার এজেন্সিগুলো দিয়ে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এ ধরনের মিথ্যা ও ঘৃণ্য কাজ করছে সরকার।
এদিকে ভুয়া চেক ভাইরাল হওয়ার পরদিন বিএনপি মহাসচিবের বিরুদ্ধে আরেকটি আবেদনপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা গেছে, চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন মির্জা ফখরুল। আবেদনপত্রে তার স্বাক্ষরও রয়েছে। তবে অপপ্রচারকারীদের গল্পের এবারের স্ক্রিপটি ছিল খুবই দুর্বল। মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরের নিচে তারিখ দেয়া আছে ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১৮। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্ত হয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ আবেদনপত্রে আবেদনকারীর জায়গায় ২০১৮ সালে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লেখা হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় আবেদনপত্রটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
ওদিকে অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও। দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির এই সদস্যের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে থেকে বানোয়াট খবর প্রচার করা হচ্ছে। সোমবার রাতে শামা ওবায়েদ নামে ওই ভুয়া ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়, ‘৩১ সদস্য নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে যাচ্ছে, প্রধান ডক্টর ইউনূস। আলহামদুলিল্লাহ’। এই বিষয়ে শামা ওবায়েদ জানান, আমার ফেসবুকে কোনো আইডি বা পেজ নেই, আমার নামে অনেকেই আইডি এবং পেজ চালাচ্ছে। কে বা কারা এমন ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করছে তা আমার জানা নেই।