DON'T MISS
Home » UK NEWS » Bangladesh politics » ভোট নয়, ‘একতরফা’ তফসিলের বিরুদ্ধে মাঠে থাকবে বিএনপি

ভোট নয়, ‘একতরফা’ তফসিলের বিরুদ্ধে মাঠে থাকবে বিএনপি

ভোটে নয়, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ‘একতরফা’ তফসিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকবে বিএনপি। দলটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আগামী

রবি ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টা হরতালের পর আবারও কর্মসূচি দেবে দলটি। প্রয়োজনে কর্মসূচির ধরন পাল্টে কোনো না কোনোভাবে মাঠে থাকার চেষ্টা করবে বিএনপি।

তবে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন সামনের আন্দোলন-কর্মসূচিগুলো কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, সে পরিকল্পনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের পাশাপাশি মাঠে সরকারি দলের মারমুখী আচরণে অবরোধের কর্মসূচিতে কিছুটা ঢিলেমি ভাব এসেছে। এরপরও তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে আরও কঠোর কর্মসূচি হিসেবে দুই দিনের হরতালের ডাক দিতে হলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক দফা এবং নির্বাচন কমিশন যে একতরফা তফসিল ঘোষণা করেছে, তার প্রতিবাদে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন ঘোষিত হরতালের কর্মসূচি আরও কার্যকরীভাবে পালন করা এবং সামনের দিনে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই বিএনপির লক্ষ্য। দলটির নীতিনির্ধারকেরা নির্বাচন পর্যন্ত এ আন্দোলন টেনে নিতে চান; যা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, একদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারি দলের সহযোগী হয়ে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে বিরোধী দলকে দমনে। এমতাবস্থায় বিরোধীরা রাস্তায় নামলেই ত্রিমুখী সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিকে একটি ‘যুদ্ধাবস্থার’ সঙ্গে তুলনা করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয়তাবাদী যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা। তিনি সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচিগুলোতে পুলিশের ভূমিকার উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বিরোধী দলকে দমনে রাতে বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে, দিনের বেলায় বন্দুক নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। এ যেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিগুলোর ওপর নজর রাখছেন—এমন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, এখন পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সেভাবে দানা বাঁধেনি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমমনা দলগুলোর তৎপরতা আন্দোলনের মাঠের শক্তি বাড়াতে পারেনি। আবার বিএনপিকে অনুসরণ করে জামায়াতে ইসলামী পৃথকভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে থাকলেও সেটিও জোরদার কিছু হচ্ছে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ। দুই দলের মধ্যে সমন্বয় দৃশ্যমান নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এবারের আন্দোলনে জামায়াত একক ভূমিকায় নেই। এই আন্দোলনের মূল সুবিধাভোগী হবে বিএনপি। জামায়াত তার সহায়কের ভূমিকায়। তাহলে জামায়াত মূল ভূমিকায় কেন যাবে।

বিএনপিসহ আন্দোলনে থাকা একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী দুই দিনের হরতালের পর নির্বাচন কমিশন ‘ঘেরাও’ কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু শরিকদের কারও কারও কাছ থেকে আপাতত ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি না দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। বিশেষ করে, বিএনপির মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার এবং অন্যদের গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনের কারণে এখনই ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচি দেওয়া, প্রয়োজনে কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়ার পরামর্শও এসেছে।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করে। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে পাঁচ দফায় ১১ দিন পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের এমন বিরোধী অবস্থানের মধ্যে গত বুধবার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তাতে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এরপরই বিএনপি চলমান আন্দোলনে হরতালের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিল।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, একতরফা নির্বাচন, একতরফা তফসিল জনগণের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*