মানিকগঞ্জের শিবালয়ে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসা জাপানের ২৭ কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি দল। আজ বুধবার বিকেলে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া ইকোনমিক জোন ঘুরে দেখেন তারা।
এসময় তারা বলেন, সরকার বিনিয়োগ করার সুযোগ দিলে, সবচেয়ে আধুনিক টেকনোলজির প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন তারা। পাশাপাশি যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের জিডিপি বাড়বে, সেসব খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখান জাপানি ব্যবসায়ীরা। এমনকি পাটুরিয়ায় পদ্মার পাড়ে প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও করে দিতে চায় তারা।
ইকোনমিক জোন পরিদর্শনের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য (মানিকগঞ্জ -১) এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, শিবালয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (বিডিএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জাপানের সমন্বয়কারী) মো. নেওয়াজ শরীফ, বিডিএ-এর বাংলাদেশি সমন্বয়কারী শামীম মোহাম্মদ আরিফ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
অধিগ্রহণ হওয়া ৪৬২ একরের শিবালয় স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শনের আগে উপজেলা পরিষদে মতবিনিময় করেন জাপানি প্রতিনিধি দল। মতবিনিময় আগে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য। এসময় স্থানীয় জনতা তাদেরকে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে সুস্বাগত জানায়। জাপানি ব্যবসায়ীরাও জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হাত উঁচিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন।
ইকোনমিক জোন পরিদর্শনের সময় সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় ম্যাপ বের করে তাদেরকে বুঝিয়ে দেন, কেন শিবালয় বিনিয়োগের জন্য আদর্শ। জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য সংসদ সদস্য বলেন, শিবালয় ঢাকা থেকে খুব কাছে। যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভালো। এখানে নদীপথেও যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। যদি তারা বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এসময় তারা বলেন, আমরা বন্ধু হিসেবে সবসময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছি। বাংলাদেশ সরকার যদি আমাদের বিনিয়োগের সুযোগ দেন, আমরা সর্বাধুনিক টেকনোলজি দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। পাশাপাশি বাংলাদেশের জিডিপি বাড়াতে সাহায্য করবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
মত বিনিময় সভায় শিবালয়ের ইউএনও মো. জাহিদুর রহমান জাপানি প্রতিনিধি দলকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আর জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু। এই সম্পর্ক সবসময় থাকবে বলে বিশ্বাস করি।
ইউএনও বলেন, শিবালয়ে বিনিয়োগ করলে সবচেয়ে বড় সুবিধা, ঢাকার খুব কাছে। সড়ক ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই মানিকগঞ্জের ৯ কি.মি. দূরত্বের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ও সৌন্দর্যমন্ডিত পদ্মা ও যমুনা নদী রয়েছে। অর্থাৎ রিভার ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান আগের মতো নেই। তারা আগের চেয়ে আর্থিকভাবে অনেকটাই সচ্ছল হয়েছে। সুতরাং বিনিয়োগ করলে এখানেও ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে।
বিডিএ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জাপানের সমন্বয়কারী) মো. নেওয়াজ শরীফ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ জাপান সফরের সময় আয়োজিত বিজনেস সামিটে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা বিনিয়োগ করতে এসেছেন। প্রথমে ৪ ইকোনমিক জোন, ব্লু ইকোনমিক ও ভোলা গ্যাসফিল্ড বিনিয়োগে আগ্রহ তাদের। এজন্য এই ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে এসেছেন। তারা ইকোনমিক জোনের জায়গা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে খুশি।
বিডিএ-এর বাংলাদেশি সমন্বয়কারী শামীম মোহাম্মদ আরিফ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের বিনিয়োগের বিষয়টি জানাতে চান। প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলে আমরা আশা করি তারা দ্রুতই বিনিয়োগ শুরু করবেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় আসেন ২৭ জাপানি কোম্পানির ৩৫ জন প্রতিনিধি দলটি। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, ৬টি প্রকল্পে (মানিকগঞ্জ ইকোনমিক জোন, রিভার ট্যুরিজম মানিকগঞ্জ ইকোনমিক জোন, লক্ষ্মীপুর স্পেশাল ইকোনমিক জোন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইকোনমিক জোন, ব্লু ইকোনমি ও ভোলা গ্যাস ফিল্ড) বিনিয়োগ করতে চায় তারা। বিডিএ বলছে, ওই ৬ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১-২% বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে আগামী একবছরের মধ্যে আরো এক হাজার জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।