স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা তৈরি হয়নি। সব সরকারের আমলেই এই তালিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদে নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য প্রায় ১১ হাজার জনের নাম সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এই তালিকায় আছেন মেয়র, সংসদ সদস্য, সচিব ও তাঁদের ঘনিষ্ঠজন।
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা তৈরি হয়নি। সব সরকারের আমলেই এই তালিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তালিকায় এখনো সব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম যেমন ওঠেনি, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে যাননি, এমন অনেক লোকের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির আইনগত কর্তৃত্ব জামুকার। বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরে (২০১৯ থেকে ২০২৩) জামুকার বৈঠকের কার্যপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই সময়ে নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ১০ হাজার ৮৯১ জনের নাম সুপারিশ করেছে জামুকা। গেজেটভুক্তির জন্য অনেকের নামে সুপারিশ করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। সুপারিশকারীদের মধ্যে জামুকার সদস্যরাও রয়েছেন। একই সময়ে ২ হাজার ১৯০ জনের নামের গেজেট বাতিল হয়েছে।
তালিকায় আছেন মেয়র, সংসদ সদস্য
গত বছরের ১১ এপ্রিল জামুকার সভায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। সভার কার্যপত্রে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে তিনি অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে মিন্টো রোডের বাসায় ঘাতকেরা হত্যাকাণ্ড চালানোর পর ভাঙচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট করে। এতে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ হারিয়ে যায়।
গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন জানিয়ে বলেন, তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বর শুনানি হয়। এতে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত হন। কিন্তু ডিজিআই নম্বর না থাকায় ২৭ জানুয়ারি জামুকার সভায় তাঁর আবেদন উপস্থাপন করা হয়নি। ডিজিআই নম্বর হলো অনলাইনে বা সরাসরি জামুকার মহাপরিচালক বরাবর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন। পরে ২৭ এপ্রিলের সভায় তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এত দিন পর কেন গেজেটভুক্ত হলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেরিতে হলে দোষের কী? আমি ভাতা নিতে যুদ্ধ করিনি।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করেছে জামুকা। তাঁর আবেদনটি গত বছরের ১৯ জুলাই জামুকার বৈঠকে ওঠে। এর আগে যাচাই-বাছাই ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গেজেটভুক্ত না করায় তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেন। মন্ত্রী বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় জামুকার বৈঠকে উপস্থাপন করা যায় বলে মত দেন।
ওই বৈঠকে তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর জামুকার সভায় ইহসানুল করিমের আবেদনের বিষয়ে কিছু অসামঞ্জস্য তুলে ধরা হয়। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি জামুকার বৈঠকে আবেদনের বিষয়টি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
যদিও পরে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইহসানুল করিমকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির সুপারিশ করে জামুকা। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ইহসানুল করিম এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।