বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বদলিজনিত কারণে কর্মস্থল থেকে বিদায় নিয়েছেন আজ সোমবার। যখন তিনি উপজেলা সদর থেকে রওয়ানা হন তখন রাস্তায় রাস্তায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়। বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকায় শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে বিদায় জানান। এসময় জনতা তাঁর নামে জয়ধ্বনি করতে থাকে। সাধারণত কোনো সরকারি কর্মকর্তার জন্য এরকম গণআবেগ দেখা যায় না।
একসময়ের অবহেলিত উপজেলাকে পর্যটন সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নান্দনিক করে তুলেছেন তিনি। উপজেলা মাল্টিপারপাস সেন্টার, পাহাড় বিলাস, হাওর বিলাস, কৃষাণ চত্ত্বর, বোয়াল চত্ত্বরসহ আরও অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গণমানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিদায়কালে হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা ক্যাটাগরিতে উল্লেখযোগ্য ও প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক ২০২৩ পেয়েছেন তিনি। ২০২০ সালে বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও হিসেবে যোগ দেন জাদিদ। পদোন্নতি পেয়ে তিনি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করবেন।
মো. সাদি উর রহিম জাদিদ নিজের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল ধারণা থেকে হাওর বিলাস, পাহাড় বিলাস, হাওর ভিউ ক্যাফে, জয় বাংলা চত্ত্বর, হাওর বৃত্ত, সেবা চত্ত্বর, বোয়াল চত্ত্বর, কৃষাণ চত্ত্বর, শহীদ মিনার, কৃষক জেলে শেড ও বিশ্রামাগার, ম্যুরাল, নিকুঞ্জ, উপজেলা প্রশাসন মাল্টিপারপাস সেন্টার, বাদাঘাট (দ:) সেবাকুঞ্জ ও নারী উদ্যোক্তা কর্ণার, ওয়াকওয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধা উদ্যান, টেরাকোটা ও ম্যাপ ফোয়ারা, করচার পাড় মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
এছাড়াও স্মৃতিসৌধ সংস্কার, উপজেলা পরিষদ গেট, কনফারেন্স রুম সংস্কার, হল রুম সংস্কার, মথুরকান্দি, বিশ্বম্ভরপুর, বাগমারা, কারেন্টের বাজার সংস্কার, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ সংস্কার, এসি ল্যান্ড অফিসরুম সংস্কার, হাওর জেটি নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন।
তবে সবচেয়ে বড় কাজটি করেছেন উপজেলা মাল্টিপারপাস সেন্টার নির্মাণ করে। এই সেন্টারে রয়েছে উন্মুক্ত মিনি এ্যাম্পিথিয়েটার, কম্পিউটার ক্লাব ও ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং সেন্টার, পাবলিক লাইব্রেরি, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ডিসপ্লে সেন্টার, শিশু একাডেমি, ইনডোর শিশু পার্ক, মিনি শিশু পার্ক, বিউটি পার্লার, জিমনেসিয়াম (ব্যায়ামাগার), রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও মার্কেট এরিয়ায় কম্পিউটার সেলস ও সার্ভিস সেন্টার, শিশুদের খেলনা দোকান, লেডিস টেইলার্স ও স্কুল ইউনিফর্ম শপ, স্টেশনারী, কসমেটিক্স ও গিফট কর্ণার ।
সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর) অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, তাঁর যোগদানের পরে উনার মাধ্যমে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আন্তরিকতার সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে সেসব কাজে তিনি সময় দিয়েছেন। অফিসের কাজের বাইরেও এই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। যখন যে বরাদ্দের জন্য বলেছেন সে বরাদ্দ আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমি আশা করি তিনি ভবিষ্যতেও মানুষের জন্যে জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন।
সরকারি দিগেন্দ্র বর্মন কলেজের প্রভাষক মো. মশিউর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত নয়নে, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় পদোন্নতি জনিত বিদায়ে আজ কর্মস্থল ত্যাগ করলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জনাব মো. সাদি উর রহিম জাদিদ। আপনি কাজের মাধ্যমে অনেক বার্তা দিয়ে গেলেন। আপনার মতো লোকের আমাদের দেশে খুবই প্রয়োজন। মহান আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন।
মো. সাইফুল আহমদ লিখেছেন, ‘ফুলেল ভালবাসায় বিদায় নিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কর্মের প্রতি ছিল একাগ্রতা, দায়িত্বের প্রতি ছিলেন নিষ্ঠাবান। তিনি কোন ক্ষমতার দম্ভ দেখাননি। বিশ্বম্ভরপুরের সাধারণ মানুষের জন্য তার কার্যালয় ছিল উন্মুক্ত। যে কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের কথা তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।’